Procoder Academy

কিভাবে ধ্বংস করবেন আপনার ক্যারিয়ার?

আমার দীর্ঘ ১২+ বছরের ক্যারিয়ার কয়েকবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল, আমি শিক্ষা নিয়েছি এবং আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। অনেকেই ক্যারিয়ার এ ভালো করে কিন্তু এই বদ অভ্যাসগুলোর জন্য সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার ধ্বংস করে ফেলে। আজ আমি বলব কেন এমন ঘটে ছিল, কিভাবে আমি ঘুরে দাঁড়িয়েছি, কেন? যাতে আপনি সতর্ক হতে পারেন এবং এগিয়ে যেতে পারেন।

😴 ঘুমকে অবহেলা করা

আমার ক্যারিয়ার এর প্রথম দিকে সারা দিন পড়তাম আর কাজ করতাম, কাজ শিখতাম। রাতে যেহেতু ফ্রিলেন্সিং করতাম প্রায় প্রতিদিন ই কম ঘুমাতাম। তখন এমন ও হতো কোন দিন রাত ১ টায় ঘুমাতাম তো অন্য দিন রাত ৩ টায়। ঘুম ছিল আমার কাছে লেস প্রায়োরিটি। কিছুদিন পর দেখলাম আমি পড়া মনে রাখতে পারি না, কাজে মনোযোগ দিতে পারি না, attention to detail এ যথেষ্ট অভাব, সারাদিন মাথা ঝিম ঝিম করে।

কেন এই সমস্যাগুলো হচ্ছে বুঝতে দেরি হলো না, পরে ঘুম কে সিরিয়ালসি নেয়া শুরু করি, মিনিমাম ৮ ঘন্টা প্রতিদিন ঘুমাতে শুরু করলাম, এখন আমি মনে করি এটা আমার one of the best decision ছিলো।

আপনি যখন প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমাবেন আপনার হার্ট ভালো কাজ করবে, শরিরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পাবে, প্রতিদিন আমাদের শরির ভিন্ন ভিন্ন হরমন তৈরি করে আপনার স্লিপিং সাইকেল ঠিক না থাকলে হরমন নিঃসরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, তাই ঘুম কে যদি এত দিন অবহেলা করে ও থাকেন, আজ থেকে রুটিন করে ঘুমান।

🎮 গেইম আসক্তি

আমি একটা সময় প্রচুর গেইমে আসক্ত ছিলাম, aspalt 8, PUBG, Need for Speed, Call of Duty নিয়ে পড়ে থাকতাম। মাঝে মাঝে আমি project late delivery ও করেছি এই গেইমের জন্য। একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার aspalt 8 ID তে ব্যাল্যান্স মাইনাস কয়েক কোটি ক্রেডিট, যত গাড়ি কিনেছি, আপডেট করেছি সব চলে গেছে। অনেক মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল, ওদের সাপোরটে কথা বলে ও লাভ হয় নি। পরে ভাবছিলাম এই যে একটা ক্যারেক্টার এত সময় নষ্ট করে বানালাম সেটা নাই, কিন্তু আমার স্কিল কোন দিন আমার থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না, (আল্লাহ ছাড়া) তারমানে এই সব ক্যারেক্টার, গাড়ি এর আসলে কোন ভেলু নাই, এর পর থেকে গেইম কে গেইম হিসেবে খেলি আসক্ত না, বোরিং টাইমে, কোন বড় কাজ করার পর নিজেকে একটু এন্টারটেইনমেন্ট দিতে মাঝে মাঝে গেইম খেলি।

দেখেন এই সব গেইম এ আপনি যতই আছিভ করেন না কেন, আপনার আরো চাই, আজ এটা তো কাল ওইটা। গেইম গুলো ডিজাইন ই করা হয় এভাবে। তাই অবসরে গেইম খেলতেই পারেন কিন্তু আসক্ত হলে বিপদ।

🎞️ সোশ্যাল মিডিয়া / সিনেমা

সোশ্যাল মিডিয়া আপনার বন্ধু ও হতে পারে শত্রু ও হতে পারে। এটা ডিপেন্ড করে আপনি এটাকে কিভাবে ব্যাবহার করছেন তার উপর। একটা সময় ছিল আমি প্রচুর মুভি দেখতাম, ইউটিউবে পাওয়া যায় এমন কোন বাংলা, হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালায়লাম মুভির নাম আপনি বলতে পারবেন না আমি দেখি নাই, একটা সময় পর দেখি আর কোন মুভি নাই দেখার মত সব দেখা শেষ শুরু করি বাংলা নাটক দেখার। ঘন্টার পর ঘন্টা ইন্সটাগ্রাম স্ক্রল করতাম। এর পর একদিন হঠাত বোধোদয় হলো এই সব বাদ দিলাম। এখন ও মুভি দেখি, বছরে একটা বা দুইটা তাও সিনেপ্লেক্সে, কেন জানেন? আমি আমাকে বলি মুভি কম্পিউটারে দেখে মজা নাই, মুভি সিনেপ্লেক্সেই দেখতে হয়। এই কারনে এখন আর খুব একটা মুভি দেখা হয় না।

আমি প্রথম থেকেই ফেইসবুক কম ব্যাবহার করি। কয়েকটা গ্রুপে জয়েন থাকি এবং ফেইসবুকে ডুকি ওই সব গ্রুপের থেকে ইনফরমেশান নেয়ার জন্য। ইউটিউবে ও আমার পছন্দের কিছু কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আছে আমি তাদের ভিডিও অনেক মনোযগ দিয়ে দেখি। এখন সারাদিনে ১ ঘন্টা আমার লিমিটেড টাইম ফর সোশ্যাল মিডিয়া। কোন পডকাস্ট থাকলে ডাউনলোড করে রাখি এবং বিকেলে হাটার সময় হাটতে হাটতে শুনি। হাটা ও হলো পডকাস্ট ও শুনা হলো।

🍿 ফাস্ট ফুড

আমি খুব ফাস্ট ফুড পছন্দ করি। KFC, Pizza hut, Burger king, Domminos কিংবা পুরান ঢাকার কাচ্ছি, ঢাকার বিখ্যাত হাতে গোনা দুই একটা রেস্টুরেন্ট ছাড়া সব জায়গায় আমার পদধূলি পড়েছে। ধরেন আমার এখন বার্গার খাবার মুড টানা ২০/২৫ দিন প্রতিদিন Burger king, কাচ্ছি খেতে ইচ্ছে হয়েছে টানা সুলতান ডাইন, কাচ্ছি ভাই, কলিকাতা কাচ্ছি, নবাব, খাসির লেগরোষ্ট খেতে ইচ্ছে হলে রাজ্জাক, স্টার, ভাই আর বলেতে চাই না।

এত খেতাম, খেয়ে টারাড হয়ে যেতাম সাথে কোল্ড ড্রিকংস, কোকাকোলা আমার ফেভারিট। বাসায় ফ্রিজ ভরতি করে রাখতাম। বাইরে গেলেই খেতাম। আমি এত বেশি খাবার ভালো বাসতাম যে কেউ যদি বলতো এত খাও কেন তার সাথে ই কথা বলা বন্ধ করে দিতাম। যে ডাক্তার খাবার কমাতে বলতো তার কাছেই আর যেতাম না। এর পর শুরু আজ এই সমস্যা, কাল ওই সমস্যা। হাঁসপাতাল, ডাক্তার, অপারেশান।

নতুন করে ভাবতে লাগলাম, নিজেকে গুরুত্ব দেয়া শুরু করলাম। এই অভ্যাস অনেকটা এখন নিয়ন্ত্রণে।

🤔 অভারথিংকিং

ক্যারিয়ার নিয়ে আপনি যাই করতে চান আপনার চিন্তা করে করা উচিত, আমি ও চিন্তা করতাম কিন্তু সেটা ছিলো অভারথিংকিং। এই যেমন যখন অনার্স পড়ছি, ভাবতাম একজন পদার্থ বিদ হয়ে এই করবো সেই করবো, খালি চিন্তাই করতাম কাজের কাজ কিছুই না। চাকরির ভাইবা দিতে গেলে ভাবতাম চাকরি পেলে কি করবো, কিভাবে কি করবো, কিন্তু আমার তো ফুল ফোকাস থাকা উচিৎ ভাইবায়, কিভাবে এটা পার করবো তাই না?

ফিজিক্স নিয়ে পড়ছি, বাংলাদেশে এটার ভালো ক্যারিয়ার নাই, যখন আশে পাসে সবাই বলছে, আমি ও বিশ্বাস করছি। জীবনে কিচ্ছু হবে না তাই আজ এইটা তো কাল সেটা করেছি। ফ্রীলেন্সিং নিয়ে ও অতটা সিরিয়াস ছিলাম না ওভার থিংকিং এর জন্য।

আমি তো জানতাম ই না যে এটা একটা সমস্যা যেটা আমাকে ভিতর থেকে নষ্ট করে দিচ্ছে। একদিন Quiet: The Power of Introverts in a World That Can’t Stop Talking by Susan Cain বইটার কয়েকটা লাইন ইন্সটাগ্রামে পাই, এত ভালো লাগে যে audiable থেকে পুরো বই শুনি, নিজের সমস্যা গুলো আইডেন্টিফাই করতে থাকি। আমার মনে হয় এই বইটা সবার পড়া উচিৎ।

একটা উদ্রিতি দিয়ে শেষ করতে চাই,

“The only way to truly change your life is to change what you believe about yourself and what you believe is possible for yourself.”

এর মধ্যে কোনটা আপনার সাথে মিলে কমেন্টে জানান, অন্য কোন উপদেশ থাকলে দিতে পারেন যাতে অন্য দের উপকার হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top